কাজী বারী
কিশোরগঞ্জ জেলার মুক্তিযোদ্ধা কালিন অষ্টগ্রাম থানার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও নির্যাতিত জননেতা কাজী আব্দুলবারী ।
১৯৩৩ সালের ২১ শে ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম সদরেরসম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে তার জন্ম। অষ্টগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়েরপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক ,ময়মনসিংহ জেলাবারের অন্যতম আইনজীবী মরহুম কাজীআব্দুল আওয়াল ও গৃহিণী মরহুম আফরোজা খাতুন দম্পতির জ্যৈষ্ঠ সন্তান কাজীআব্দুল বারী । পিতার পেশাগত কারনে কাজী বারী’র শৈশব ও শিা জীবন শুরু হয়ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে। ৮ বিষয়ে লেটার নিয়ে মেট্রিক পাশ করা এই মেধাবী ছাত্র১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন বেগবান করতে ময়মনসিংহ শহরে ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়েমিছিলে অংশগ্রহন করায় তিনি প্রথম গেপ্তার ও কারা বরন করেন। মুক্তি পেয়েময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের (বর্তমানে আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয়) ২ বার ভিপিনির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফন্টেরনির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখার অপরাধে তিনি ২য় বার গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৮সালে পাকিস্তান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি যোগদান করেন এবং ময়মনসিংহ জেলাছাত্রলীগের সভাপতি ও পুর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নির্বাচিত হন।সে সময় করাচিতে এক ছাত্র সম্মেলনে পুর্ব পাকিস্তানের ছাত্র/ছাত্রী ওজনজীবনের দুরাবস্তার চিত্র তোলে ইংরেজি বক্তব্যে কাজী বারী’র মেধা কঠিনমনোবল ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দৃষ্টিকারে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের আর প্রতিহিংসারশিকার হন সরকার যন্ত্রের। বার বার গ্রেপ্তার কারাবরণ ও রাজনৈতিককর্মকাণ্ডের কারণে মেধাবী এই ছাত্রনেতার শিাজীবন বেশিদূর এগোতে পারেন নি।পরে পাকিস্তান ন্যশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দিলে পুর্ব পাকিস্তানকেন্দ্রীয় ন্যাপের সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ।
১৯৫৮ সালের সামরিক শাসক আইয়ুব খান রাষ্ট্রমতা দখলের প্রতিবাদে ময়মনসিংহসার্কিট হাউসে সমাবেশ করার কারনে তার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার হুলিয়া জারিকরেন। তিনি রাজনৈতিক কৌশলে আত্মগোপনের কিছু দিন পর গ্রেপ্তার হন সামরিকআদালতে তিন বছর জেল ও ১০ টি বেত্রদণ্ডে দণ্ডিত করেন। অন্যায় এ শাস্তিবাতিলের জন্য তাদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া), চীন, ভোলগেরিয়া সহবিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশ পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও দণ্ডকার্যকর হয় । বেত্রদন্ডের আঘাতে জীবনের মত বধির হয়ে যান তিনি ।
১৯৬৩ সালে মুক্তি পেয়ে আবার বৃহত্তম ময়মনসিংহের দলীয় কর্মকাণ্ডেআত্মনিয়োগ করে প্রগতিশীল আন্দোলন বেগবানের জন্য হাওরাঞ্চলে বিশাল কর্মীবাহিনী ঘরে তোলেন। ৬৯ এর গনঅভুত্থানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের গণজাগরণ সৃষ্টিকরেন। ৭০ এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপদে প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করেন ।
৭ই মার্চ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে দেশ যখন উত্তালহয়ে উঠে তখন কাজী বারী কিশোরগঞ্জ সাংগঠনিক জেলা ও হাওরাঞ্চল সর্বদলীয়সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনিত হন । ২৬ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধুরস্বাধীনতা ঘোষণার একটি তার বার্তা পেয়ে কাজী বারী অষ্টগ্রাম সদর ও পুর্বঅষ্টগ্রাম ইউনিয়নের হাট বাজারে শত শত কর্মী জড়োকরে তার বার্তার বিষয় বস্তুতোলে ধরে কর্মীদের যুদ্ধে অংশগ্রহনের আহব্বান করেন । প্রথমে ইপিআর থেকে আগতজনৈক হাফীজ উদ্দিনের তত্তাবধানে এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিন শুরুকরেন । পরে অনেক ছাত্র যুবক নিয়ে তিনি ভারতে চলে যান । সেখানে মেঘালয়ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিন,যুদ্ধে প্রেরণ ও ক্যাম্পে অন্যতম দ্বাায়িত্ব পালন করেন।
হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অষ্টগ্রাম এসে প্রথমে কাজীবারী’র বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করে । পরে তার ভগ্নিপতি ন্যাপ নেতা আবুল খায়েরখান কে হত্যা সহ আতœীয় স্বজনদের ব্যাপক তি সাধন করে হাওরাঞ্চলে ধ্বংস লীলাশুরু করে।
স্বাধীনতা উত্তর তিনি অষ্টগ্রামে এসে ন্যাপ রাজনীতিতে স্বক্রিয় হন ।দলীয় কর্মকান্ড ছাড়াও কৃষক সমিতি সহ নানা সমাজকল্যাণ সংগঠন করে গনতান্ত্রিকও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে হাওরের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুষ দুর্নীতি আরদীর্ঘসূত্রতা প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং বল্লী গায়েলা ও ঝাজর বিলের ইজারাপ্রথা বাতিল, জেলে অত্যাচার বন্ধ হয়ে যায়। তখন জেলেরা ভাষান পানিতে অবাদেমাছ ধরার সুযোগ পায়। সে সময়কে প্রগতিশীল রাজনীতির তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিতহয় হাওরাঞ্চল । কাজী আব্দুল বারী’র ডাকে হাওর জনপদের বিভিন্ন সভাসমাবেশেউপস্থিত হন অধ্যাপক মোজাফর আহম্মেদ, মতিয়া চৌধূরী (বর্তমান কৃষি মন্ত্রী), পংকজ ভট্টাচার্য্য ,চৌধূরী হারুন অর রশিদ, পীর হাবিবুর রহমান, মাওঃ আহমদুররহমান আজমি, কমরেড মণি সিংহ অধ্য ফজলুল হক খন্দকার, অনিমা সিংহ, অজয় রায়প্রমূখ জাতীয় বাম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ।
৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী বারী ন্যাপের প্রার্থী হিসেবেনির্বাচন করেন। ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে নিহত হলে তিনিইপ্রথম ব্যক্তিগত প্রতিবাদ করেন এবং আত্মগোপন করেন। সে সময় কাজী বারী’র মামারাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহাম্মদ বঙ্গভবনে ডেকে নিয়ে মন্ত্রীপরিষদে যোগ দিতে বলেন। কাজী বারী সেই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেবঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে গ্রেপ্তার ও জেলবাসী হন। জেলে রক্তচাপ, ডায়বেটিস, কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় মুক্তি পেয়ে অষ্টগ্রামেআসেন। আজীবন সংগ্রামী রাজনৈতিক প্রবাদ পুরুষ ১৯৮৩ সালের ২১ ডিসেম্বরইন্তেকাল করেন। সংসার জীবনে সহধর্মিণী রাশেদা বারী দু’ছেলে কাজী শফিকুলআওয়াল কল্লোল ও কাজী রফিকুল আওয়্লা বিপুল, দু’ মেয়ে কাজী হামিদা আফরোজ ওকাজী নন্দিতা বারী। তাদের দাবী নির্মোহ প্রতিযশা এই নেতা রাজনৈতিক দৈন্যতারকারণেই প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব পায় না কিন্তু তার আদর্শ উজ্জীবিতরা তাকেনিয়ে আজও গর্ববোধ করে।
রাজনৈতিক কাব্যগাথা অসম্প্রদায়িক দৃঢ় চেতানার নেতা কাজী আব্দুল বারী’র৫০ বছর বর্ণাঢ্য জীবন পথে নানা অত্যাচার অবিচার, বেত্রদণ্ড আর ষোল বছর জেলজুলুম সত্ত্বেও আদর্শের রাজনৈতিক আকাশে তিনি উদ্ভাসিত এক নত্র। আমরা তাঁরঅবদানের কথা কখনো ভূলতে পারি। তিনি আছেন, থাকবেন, নীরবে, অন্তরালে সবারঅন্তরে অন্তরে। তাঁর স্মৃতিতে আত্মার শান্তিতে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অষ্টগ্রামের কয়েকজন কৃতি সন্তান
১। অষ্টগ্রামের খ্যাতনামা ব্যক্তি অনাথ গোপাল সেন বিট্রিশ ভারতেকংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন।
২। ব্যারিস্টার নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার পশ্চিমবঙ্গেরমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর ভ্রাতা নরেন্দু দত্ত মজুমদার অসাধারণ মেধাবী আইসিএসঅফিসার ছিলেন। ভারতীয় রাজনীতি শিা এবং প্রশাসনিক েেত্র এদের অবদানের কথাসর্বজন স্বীকৃত।
৩। খান বাহাদুরমোয়াজ্জেম হোসাইন অষ্টগ্রামের আরেক কৃতি সন্তান। প্রথম জীবনে সরকারি চাকুরীহলেও পরবর্তীতে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। (১৯৩৬ খ্রিঃ) মুসলিম লীগের সক্রিয়কর্মী এবং সাংসদ হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে খাজা স্যার নাজিমউদ্দিনের মুসলিম লীগ মন্ত্রী সভায় মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে হোসেনশহীদ সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রী সভায় শিা ও রাজস্ব মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৪৬খ্রিঃ অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে খান বাহাদুর খেতাব বর্জন করেন্। পাকিস্তানআন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর তদানিন্তনপূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফন্ট্রের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিনহোসেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি পাকিস্তানআন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় কর্মী।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস